এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০১৫

আলেম দের মোবাইল নাম্বার


আলেম দের মোবাইল নাম্বার


❂যে পোস্ট এ যাবৎ কেউ দেয়নি,তাই শেয়ার করে সংরক্ষণ করে রাখুন! ◘বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের ফোন নাম্বার! (কেউ প্রয়োজন ছাড়া ফোন করে বিরক্ত করবেন না)
☞শায়খুল হাদীস অাল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. (হেফাজত আমীর) →০১৮১৯৩২৩৬০১

☞মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম দা.বা.(পীর সাহেব চরমোনাই ও আমীর ইসলামী অান্দোলন বাংলাদেশ) →০১৮১৪৮৫১৫১৩

☞মুফতী আব্দুস সালাম দা.বা.(প্রাধান মুফতী হাটহাজারী মাদ্রাসা) →০১৮১৯৬৪০৩৫৬

 ☞শায়খুল হাদীস আব্দুল হাই দা.বা.(পাহাড়পুর ী) →০২-৯৫৫৪২৩০

☞ফক্বীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান দা.বা. (বসুন্ধরা) →০১৮১৯২৫৮৪৪১

☞শায়খুল হাদীস আশরাফ আলী দা.বা.(কুমিল্লা) →০১৮১৯৮৯৮৩৬১

☞মুহিউসসুন্নাহ শায়খুল হাদীস মাহমুদুল হাসান দা.বা. (যাত্রাবাড়ী) →০১৭১১৫২৪১৭৬

 ☞মাওঃ আঃ জাব্বার জাহানাবাদী দা.বা. (বেফাক মহাসচিব) →০১৭০৪৭৫৯১৯৫

 ☞মুফতী আঃ মালেক সাহেব দা.বা. (মারকাযুদ্দাওয়াহ) →০১৭১২৮৪১৮৪৭

 ☞শায়খুল হাদীস জাকারিয়া সাহেব দা.বা.(মাদানীনগর মাদ্রাসা) →০১৭৩২১৬০২৯০

☞মাওঃ মহিউদ্দীন খান দা.বা.(সম্পাদক,মাসিক মদীনা) →০২-৭১১০৪৬০

☞শায়খুল হাদীস আঃ কুদ্দুস দা.বা.(ফরিদাবাদ) →০১৮১৯২৪৯৩৮১

☞মুফতী মাহফুজুল হক (প্রিন্সিপাল জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া)_> ০১৭১১১৫৪২০২



☞মুফতী ওয়াক্কাস সাহেব দা.বা. (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম) →০১৫৫২৩৩০১৬৬

☞মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. (মুহাম্মদপুর মাদ্রাসা) →০১৭১২৮৯৭১৮১

☞অাল্লামা ফরিদউদ্দীন মাসউদ দা.বা.(ইমাম শোলাকিয়া ঈদগাহ) →০১৭১৫০৪৩০৬৮

☞অাল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দা.বা. (হেফাজত মহাসচিব) →০১৮১৫৯১৫৮২০

 ☞মুফতী আবু সাঈদ সাহেব দা.বা.(ফরিদাবাদ মাদ্রাসা) →০১৮১৮৬৮১৪৪৬

☞শায়খুল হাদীস শামসুল হক দা.বা.{বি-বাড়ীয় া(শহিদবাড়ীয়া)} →০১৭৫৩৮৭১০৫৮

☞অাল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী দা.বা. (সিলেট) →০১৭১৮৯২৫৯৩২

☞মাওঃ নুর হোসাইন কাসেমী দা.বা. (বারিধারা) →০১৭১২৯৩২৩৩৫

☞মাওঃ আঃ আউয়াল সাহেব দা.বা.(পীর সাহেব,আড়াইহাজার) →০১৭১১১২৪৯৮১

☞আল্লামা আহমাদুল্লাহ অাশরাফ দা.বা. (আমীর,খেল াফত আন্দোলন) →০১৭১১৫৪৪২২৭

☞মুফতী ইজহারুল ইসলাম দা.বা.(চট্টগ্রাম) →০১৭১১২৬৩৪৫৩

☞হাঃ মাওঃ ফয়জুল্লাহ সাহেব দা.বা.(পীর,সন্দ ীপী) →০১৭১২৯৪৪০৫০

☞মাওঃ আঃ মতিন সাহেব দা.বা. (পীর,ঢালকানগর) →০১৭১১৬৯৫৯৮৬

☞মুফতী দেলোয়ার হোসাইন দা.বা.(অাকবর কমপ্লেক্স) →০১৭১১১৫৩০২৯

 ☞মুফতী আবুল ফাতাহ মুঃ ইয়াহইয়া দা.বা. (মালিবাগ মাদ্রাসা) →০১৮১৮৭৩২৫৩৩

☞মুফতী রফিউদ্দিন আহমাদ দা.বা. (ঢালকানগর মাদ্রাসা) →০১৯৮১২০৮১৮৯

 ☞মুফতী শহীদুল ইসলাম দা.বা.(সাবেক এমপি) →০১৯২৫৯৪৬৪৩৭

☞মুফতী কামাল উদ্দীন রাশেদী দা.বা. (যাত্রাবাড়ী) →০১৭২০১৫৩০২৭

☞মুফতী বোরহান উদ্দীন রাব্বানী দা.বা. (জামিয়া আবু বকর রাঃ) →০১৭১২৫৫৬৪১৮

 ☞মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ দা.বা.(ঢাকা) →০১৮১৯২৫১০৭০

☞মুফতী হিফজুর রহমান দা.বা. (জামিয়া রাহমানিয়া) →০১৭১৬৩২৯৮৯৮

☞মুফতী ইমরান মাজহারী দা.বা. (মিরপুর) →০১৭১১৯৬৯৪৭৪

☞মুফতী কেফায়াতুল্লাহ দা.বা.(হাটহাজার ী মাদ্রাসা) →০১৯২৪১৪১৪৮৭

☞মুফতী ফয়জুল করীম দা.বা.(নায়েবে আমীর ইসলামী অান্দোলন) →০১৭১২০১৮০৯৮

আমার শিক্ষকগন

☞মাও: লিয়াকত আলি : ০১৮১৭০৪০১৮০


*বিঃদ্রঃ আপনার কাছে অনুরোধ বরকত হিসেবে নাম্বারগুলি কাছে রাখবেন,ভুলেও মিস কল দিবেন না

সোমবার, ২৯ জুন, ২০১৫


কওমি মাদরাসা

কওমি মাদরাসা নিয়ে আমার যতো প্রতিবেদন


সমাজবান্ধব শিক্ষার দরিদ্রবান্ধব চিত্রায়ন
রোকন রাইয়ান

মিরপুর মাদরাসা দারুর রাশাদের সাবেক ছাত্র আল আমিন। বাবা প্রাইমারি স্কুল টিচার। ভালো ব্যবসাও আছে। তাকে এলাকার স্কুল পড়–য়া এক চাচাত ভাই বলেছিল, মাদরাসায় কেন পড়িস! এখানে তো পড়ে গরিবরা। আল আমিন সেদিন তার কথার কোনো জবাব দেয়নি। লজ্জায় লাল হয়েছে। একদিন দুইজনেরই পড়ালেখা শেষ হয়। আল আমিন এক মাদরাসায় চাকরি নেন। বেশ সুনামের সঙ্গেই শিক্ষকতা করেন। টাকা পাঠান বাড়িতে। কিন্তু সেই চাচাত ভাই অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বাড়িতে বসা। অনেক জায়গায় বায়োডাটা নিয়ে ঘোরাঘুরিও করেছেন। চাকরি হয়নি। শেষে এলাকার এক বেসরকারি স্কুলে চাকরি ঠিক হয়। তবে সেখানে ঘুষ দিতে হবে পাঁচ লাখ টাকা। সে জন্য ফসলি জমি বেচেন তার বাবা।
সেই ঘটনা দেখে আল আমিনের মুখ লাল হয়নি। মুচকি হেসে চাচাতো ভাইকে বলেছেন- মাদরাসায় তো গরিবরা পড়ে, পড়া শেষে মাদরাসা তাকে ধনী বানায়। কিন্তু স্কুল তো তোদের গরিব বানাল।
আল আমিন বলেন, মাদরাসায় গরিবরাই পড়ে এটা উড়ো কথার মতোই। একটা প্রতিষ্ঠানকে ধনী-গরিবে চিহ্নিত করা বেমানান।
বিষয়টিকে এভাবেই দেখলেন রাজধানীর জামিয়া ইকরার ২০১০ সালের দাওরা সমাপনকারী মাওলানা মুহাম্মদ আনুপ। তার মতামত হলো কোনো একটা প্রতিষ্ঠানকে ধনী-গরিবে চিহ্নিত করা বোকামি। এখানে সব ধরনের লোকই আসবে। শিক্ষা নেবে। তিনি তার উদাহরণ টেনে বলেন, আমার বাবা ঢাকার কেরাণীগঞ্জে আটটি ব্রিকফিল্ড-এর মালিক, একটি রিয়েল অ্যাস্টেট কোম্পানিও রয়েছে। ঢাকায় বাড়ি এবং গাড়িও রয়েছে। কিন্তু আমাকে তিনি কওমিতে পড়িয়েছেন। এর জন্য কারো তশকিলেরও দরকার হয়নি।

দেশে তিন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি কওমি মাদরাসা। সাম্প্রতিককালে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগের স্রোত উঠেছে। বড় অভিযোগ এ শিক্ষা ব্যবস্থা দরিদ্রবান্ধব। এখানে কেবল এতিম আর গরিবরাই আসে। দান খয়রাতে নির্ভরশীল থাকে মাদরাসাগুলো। এর আগে সরকারি বা জরিপ সংস্থাগুলোর কোনো ধরনের পদক্ষেপ না থাকায় বিষয়টি এভাবেই নিয়েছে সাধারণ মানুষ। তবে লিখনীর পক্ষ থেকে একটি জরিপ করলে বেড়িয়ে আসে বড় ধরনের পার্থক্য। বেড়িয়ে আসে অবাক করা তথ্যও। জানা যায়, এক সময় ছোট পরিসরে মাদরাসাগুলো প্রতিষ্ঠিত হলেও বছর দশেক পর থেকেই এটি সমাজের সব শ্রেণীর মধ্যে বিস্তৃত হতে থাকে। বর্তমানে মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে ধনিক শ্রেণীর সংশ্লিষ্টতা বাড়ছেই না বাড়ছে অত্যাধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মাদরাসার সংখ্যাও। সমাজের নিন্মশ্রেণীর পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এলিট শ্রেণী। আর এর প্রধান কারণ মাদরাসাছাত্রদের নীতি আদর্শ ও নৈতিকতা।
বেফাকুল মাদারিস ও শিক্ষা জরিপ সংস্থা বেনবেইস-এর তথ্যমতে বাংলাদেশে কওমি মাদরাসার ছাত্র সংখ্যা ১৪ থেকে ২০ লক্ষাধিক। নুরানি, হিফজখানা মিলিয়ে মাদরাসার সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজার। বিপুল সংখ্যক এই মাদরাসার ভেতর থেকে এতিম-গরিব চিহ্নিত করা দুষ্কর। তবে রাজধানীসহ আশপাশের প্রায় ৫০টি মাদরাসার জরিপে দেখা যায় ৮০ পার্সেন্ট ছাত্র আসছে উচ্চ ফ্যামিলি থেকে। উল্লেখিত মাদরাসাগুলোতে এতিমের সংখ্যা ১০ পার্সেন্ট। জরিপকৃত মাদরাসাগুলোর অধিকাংশ শিক্ষকই জানিয়েছেন, কওমি মাদরাসায় ফ্রি খাওয়ার একটা ব্যবস্থা রয়েছে। এটা তারা সমাজের দায়বদ্ধতা থেকেই করে থাকেন। কেননা এসব মাদরাসায় বিশাল একটা শ্রেণী ডোনেশন করে থাকে। তাদের ডোনেশন সঠিক খাতে ব্যয়ের জন্যই এই ব্যবস্থা।
অধিকাংশ মাদরাসাতেই ছাত্রদের ফ্রি খাবার নির্ধারণ করা হয় মেধার ভিত্তিতে। গড় নাম্বার আশির উপরে থাকলে ফ্রি খাবারের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু এদের মধ্যেও অনেকেই টাকা দিয়ে খায় বলে জানা গেছে। তবে দেশের প্রায় সব মাদরাসাতেই সকালের নাস্তা ও আবাসিক চার্জ দিয়ে থাকতে হয়।
রাজধানীর বৃহৎ মাদরাসা জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মুহাম্মদপুরের দাওরায়ে হাদিসের ছাত্র মাওলানা ওমর শাহ জানান, জামিয়া রাহমানিয়ায় ১২০০ ছাত্র রয়েছে। এদের মধ্যে বোর্ডিং থেকে খাবার ক্রয় করে খায় ৭৩২ জন শিক্ষার্থী। বিশেষ ব্যবস্থায় ফ্রি খাবার পায় ৪৪২ জন। বাকিরা হোটেল বা অন্যান্য বাসাবাড়ি থেকে ক্রয় করে খান।
জরিপে অংশ নেয়া ছাত্ররা আরও জানিয়েছেন, ইদানীং গরিব পরিবারগুলোর মধ্যে এই কথা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যে, কওমি মাদরাসায় পড়লে চাকরি পাওয়া যায় না। সে কারণে দেখা যায় ওই পরিবারগুলোর চাহিদা থাকে অন্যদিকে। আর উচ্চ শ্রেণির কর্তারা ঝুঁকছেন মাদরাসাগুলোর দিকে। যারা অধিকাংশই সরকারি চাকুরে বা বড় ব্যবসায়ী।

এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ‘ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহী’র শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা লাবীব আবদুল্লাহ বলেন, মানুষ যাই করুক দিন শেষে একটা আত্মতৃপ্তি খোঁজে, এ জন্যই মাদরাসায় আসে। আর যারা একে গরিববান্ধব বলেন তাদের বলব, আমাদের রাষ্ট্রই তো বিদেশি ঋণের ওপর চলে। এখানকার প্রতিটি মানুষ বেড়ে উঠে ঋণ আর ধার করা টাকায়। একটা প্রতিষ্ঠানের বেলায় এমন প্রশ অনুচিৎ। ইদানীং কওমি মাদরাসায় যারা পড়েন তাদের অনেকের আসবাব ও চলাফেরার স্টাইল অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো।
জরিপে আরও জানা যায়, ইদানীং দেশের সব জেলাতেই উন্নত কাঠামো ও অত্যাধুনিক কারিকুলামে তৈরি হচ্ছে অনেক মাদরাসা। যেসবে উন্নত খাবার ও আবাসন সুবিধাসহ যোগ হচ্ছে নানান সুবিধা। এসব মাদরাসায় ফ্রি থাকা-খাওয়ার কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। খাবার ও আবাসিক চার্জ পড়ে ৩ থেকে ৪ হাজারের মতো। এছাড়াও সারা দেশে অবস্থিত মহিলা মাদরাসাগুলোতে কোনো প্রকার ফ্রি খাবারের সুযোগ নেই। আশ্চর্য হলেও সত্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিনদিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এমনি একটি মাদরাসা রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত। নাম ‘মাদরাসাহ কুরআনিল কারিম’। এর প্রিন্সিপাল মাওলানা আতিকুল্লাহ জানান, আমার মাদরাসায় প্রায় ২০০ জন ছাত্র রয়েছে। মাদরাসার বয়স চার বছর। এখানে সব ছাত্রই আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা চার্জ দিয়ে থাকছে। তিনি তৃপ্তি প্রকাশ করে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালো রেজাল্টের কারণে এখানে ছাত্র সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
কওমিকে যারা দরিদ্রবান্ধব বলে অপপ্রচার করেন তাদের জন্য চমৎকার জবাব রয়েছে মাদরাসার ইতিহাসে। কেবল এটাই নয় কওমি ছাত্রদের মধ্যে থেকে উঠে আসা ব্যক্তিরা সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পদে রয়েছেন এবং সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন লোকের সংখ্যাও হাতেগোনা নয়। জানা যায়, কওমি মাদরাসা থেকে ইতোপূর্বে মাওলানা উবায়দুল হক জালালাবাদি, মাওলানা আতাউর রহমান খান, মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী, মুফতি ফজলুল হক আমিনী, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতি শহিদুল ইসলাম, মাওলানা শাহীনুর পাশা প্রমুখের মতো অনেক আলেম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং এলাকা ও সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। রাজনীতির ময়দানেও আলেমরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন এবং তাদের ডাকে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশের নজিরও রয়েছে। মাদরাসা ছাত্ররা এসব স্মরণ করে বলেন, প্রশাসনের বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে সামান্য সহানুভূতি পেলে এমন অনেক আলেম রাষ্ট্রের উঁচু পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা রাখেন।
কওমি মাদরাসার আলেম বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের চেয়ারম্যান মুফতি গোলাম রব্বানী এ বিষয়ে বলেন, আসলে কওমি মাদরাসাকে যারা দরিদ্রবান্ধব বলেন আর অবহেলার দৃষ্টিতে দেখেন তাদের জানার পরিধি কম। এটা অনস্বীকার্য যে একটা শিক্ষায় সব ধরনের ছেলেরাই আসে। সেখানে গরিব আর মেধাহীন শিক্ষার্থীও থাকে। এটা স্কুল কলেজেও অহরহ আছে। এর জন্য কওমিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আর সমাজের মূল জায়গাগুলোয় তারা আসতে পারছেন না এর কারণ এদেরকে কোনঠাসা করে রাখার প্রবণতা। সরকার কওমি সনদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না। ফলে এরা বড় কাজে আসার সুযোগ কম পাচ্ছে। তবে অনেক ছেলেই কিন্তু বিকল্প উপায়ে এসব জায়গায় আসছে। যেমন আমার কথাই ধরি, কওমি শেষ করে আলিয়া থেকে আলিম পড়ে ঢাবিতে যখন ১১০০ নাম্বারের পরীক্ষা দিলাম তখন আমার কেবল ইতিহাস বিষয়টা বাড়তি পড়তে হয়েছিল। এছাড়া অন্য সাবজেক্টগুলো পড়তে হয়নি। তার মানে এর চাহিদাগুলো কওমিতেই পূরণ হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে কেবল কিছুই হচ্ছে না, হবে না এসব গৎবাঁধা শব্দে কওমি আটকিয়ে লাভ নেই। তাদেরকে সুযোগ করে দেয়া উচিত। তাহলে এরা রাষ্ট্রেরই সম্পদে পরিণত হবে

খয়রাতি শিক্ষা কওমি না স্কুল?

কওমি মাদরাসাগুলোকে যে কারণে অনেকে খয়রাতি শিক্ষা বলেন, তার প্রধান হলো জনসাধারণের দান। মূলত মাদরাসাগুলো ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা ও তাদের সততার কারণে মানুষ এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থাশীল। তাই এখানে সরাসরি আর্থিক সহায়তা করেন তারা। যা কোনো মাধ্যম ছাড়া উপস্থিত হয়। কিন্তু একই প্রশ্নে অভিযুক্ত হয় দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলো? শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুারো’র ২০১১ সালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৬৯ হাজার ৫৭ হাজার ৮৯৪ জন। অন্যান্য স্তরের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত রয়েছে ৭৫ লাখ ১০ হাজার ২১৮ জন শিক্ষার্থী। স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরগুলোতে প্রায় দুই কোটি ছাত্র/ছাত্রী ফ্রি পড়ালেখা করছে। তাদের কোনো প্রকার বেতন-ভাতা দিতে হয় না উপরন্তু এদের ঝরে পড়া রোধ করতে সরকারি উদ্যোগে চাল-গম ও উপবৃত্তি চালু রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাবৃত্তি এবং ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন কেন্দ্রিক শিক্ষা উপকরণসহ আর্থিক সহায়তা প্রদান। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এই দুই কোটি শিক্ষার্থী ফ্রি পড়ালেখার খরচ দিচ্ছে সরকার, সেই সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন ভাতাও, কিন্তু সরকার টাকাটা পাচ্ছে কোথায়? এই টাকাও সাধারণ জনগণের গায়ের ঘাম শুকানো টাকার অংশ। মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় যেসব পণ্য কিনছে সেসব থেকে বড় একটা অংশ কর হিসাবে যাচ্ছে সরকারের কাছে। সেই জনগণের টাকাই বিভিন্ন হাতঘুরে যাচ্ছে স্কুল, বিদ্যালয়গুলোতে। এখানে কোনো রকম বাছ-বিছার না থাকায় আসছে ঘুষ-চুরি ও দুর্নীতির টাকাও। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ে কিছু কিছু ছাত্র বিপথগামীতার দিকেও ধাবিত হচ্ছে। হারাচ্ছে মেধা ও উৎপাদন ক্ষমতা এবং নৈতিকতাবোধ। সমাজে অপরাধমূলক কর্মকা- বাড়ার দায়ও নিতে হচ্ছে এদের অনেককেই।
এ বিষয়ে কথা বললে বিশিষ্ট আলেম গবেষক ও দেশ অধ্যয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী লিখনীকে বলেন, কওমি মাদরাসা সূচনাকালে এমনটা থাকলেও এখন এ কথা বলার সুযোগ নেই। এ ধারায় বর্তমানে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ সম্পৃক্ত। এর চেয়ে বড় বিষয় কওমি মাদরাসায় যে পরিমাণ দান আসে তার চেয়ে বেশি দান যায় স্কুল-আলিয়ায়। তবে সেটা অদৃশ্য হওয়ায় চোখে পড়ে না। আর কওমি মাদরাসায় আসে সাধারণ জনগণের ভেজালমুক্ত উপার্জনের টাকা। যেটা তারা মনের তৃপ্তির জন্য দিয়ে থাকেন। সুতরাং এর জন্য কওমি মাদরাসাকে দরিদ্রবান্ধব বলা অনুচিত ও বোকামি।

শিক্ষাবৃত্তি ও ঝরে পড়া রোধ প্রসঙ্গ

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে সরকারি ও বেসরকারি অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দীর্ঘদিন ধরেই চালু আছে শিক্ষাবৃত্তি। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ দিয়ে থাকে শিক্ষার্থীদের। মজার ব্যাপার হলো এই শিক্ষাবৃত্তি বা ঋণের কোনো তালিকাতেই নেই কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। সবই স্কুল কলেজ বা আলিয়া মাদরাসার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য। বর্তমানে স্কুলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসবের মধ্যে ডাচবাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক ও গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক ছাড়াও আছে বিভিন্ন কোম্পানি। যারা নিয়মিত দরিদ্র ছাত্র/ছাত্রীদের অর্থ সহায়তাসহ বিভিন্ন রকম প্যাজেক সুবিধা দিয়ে থাকে। এখানে রয়েছে ব্যক্তি কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যারা নিয়মিত দরিদ্র ছাত্রদের নিয়ে কাজ করে থাকে। আর এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে জনগণের ডোনেশন ভিত্তিক। সেটাও এক ধরনের খয়রাত। এমন পদ্ধতির খয়রাতি টাকায় শিক্ষিত হওয়ার নজির কওমি শিক্ষার্থীদের নেই। হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন নামের রাজধানীর একটি শিক্ষা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর ৬০ জন দরিদ্র শিক্ষার্থীকে ঋণ দিয়ে থাকে। ডপ্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে দুইশ’ থেকে তিনশতাধিক ছাত্র/ছাত্রীকে খাতা ও কলমের যোগান দেয়। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সেনাসদস্য শাহিন মিয়া লিখনীকে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, শিক্ষার ধনী-দরিদ্র নেই। সবাই শিক্ষা অর্জন করবে। যেখানে যেভাবে সুযোগ পায়। স্কুলের যে সবাই উচ্চ পরিবারের এমন হলে তো আমরা এ ধরনের সহায়তামূলক কাজ করতাম না।
দেশে হিউম্যান বা ডপ্সের মতো হাজারো সামাজিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সাধারণ শিক্ষার জন্য এমন দান-খয়রাত বা ডোনেশনের ব্যবস্থা করে থাকে।

স্কুলগুলোতে প্রাথমিক থেকে ঝরে পড়া রোধ করতে সরকারি বা বেসরকারিভাবে নানান উদ্যোগ চালু আছে। এই উদ্যোগগুলোর জন্য খরচ করতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। দেশের প্রাইমারি লেবেলে সব ছাত্রছাত্রীর জন্যই রয়েছে উপবৃত্তি। আবার অনেক জায়গায় রয়েছে টিফিন। বিভিন্ন জায়গায় কর্মশালা, সেমিনার ও উঠোন বৈঠকও করা হয়। ব্র্যাক বা আনন্দ স্কুলগুলোতে ছাত্র/ছাত্রীদের ধরে রাখতে প্রতিদিন টিফিন বা মাসিক বেতন সিস্টেম চালু করেছে। ২০১১ সালে সরকারি উদ্যোগে শিশুদের ঝরে পড়া রোধ করতে শিখনকেন্দ্র নামের একটি প্রকল্প খোলা হয়। যাতে ব্যয় ধরা হয় ১৪৮ কোটি টাকা।
অথচ এরই বিপরীতে কওমি মাদরাসাগুলোর লাখ লাখ ছাত্রের কোনো ঝরে পড়ার ইতিহাস নেই বললেই চলে। আর এখানে এরকম কোনো উদ্যোগ, অর্থ খরচ, টাকা-নাস্তা বা বিনোদন ইত্যাদি প্রলোভন দিয়ে ক্লাসে আনার ঘটনাও কল্পনাতীত। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্নভাবে যেখানে ঝরে পড়া রোধে নানা রকম কসরৎ করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না সেখানে বিনাশ্রমে কওমি ছাত্রদের শিক্ষা অর্জন মানুষকে অবাক ও বিস্মিত করে তোলে।

মাদরাসায় এতিম শিক্ষার্থী সমাচার

কওমি মাদরাসাগুলোতে বিশাল জনগোষ্ঠীর একটা অংশ রয়েছে এতিম। যারা কোনো রকম অর্থ ছাড়াই শিক্ষালাভের বড় ধরনের সুযোগ পাচ্ছে। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এতিমদের জন্য চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ নেই। তবে সরকারি বেসরকারিভাবে কিছু এতিমখানা রয়েছে যেগুলোতে সামান্য সংখ্যক শিশু সুযোগ পাচ্ছে পড়ালেখার। যা চাহিদার ১০ পার্সেন্টও পূরণ করতে পারছে না। অথচ এই শিক্ষা ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের এগিয়ে নিতে কাজ করছে কওমি মাদরাসা। এ বিষয়ে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া বলেন, মাদরাসায় এতিমরা পড়ে এটা নিয়ে যারা বিদ্রুপ করে তারা মুর্খ। বরং মাদরাসাগুলো হাজারো ছিন্নমূল শিশুকে কুড়েঘর থেকে উঠিয়ে সমাজের বড় অংশের সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষা-দীক্ষায় উঁচু বানিয়ে দিচ্ছে। এটা অনেক বড় কৃতিত্বের।
তিনি বলেন, আসলে এই মাদরাসাগুলো হলো সমাজবান্ধব। একে এক ধরনের মিডিয়া দারিদ্রের প্রতিভূ বলে অপপ্রচার করছে। যা আদৌ ঠিক নয়

সিলেবাস সংস্কার : স্বীকৃতির আগে না পড়ে


দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে কওমি মাদরাসা। তবে এ শিক্ষা ব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। এ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। হয়েছে রাজনীতিও। বর্তমানে স্বীকৃতি বিষয়ে কাছাকাছি চলে এলেও অনেকটা তীরে এসে তরী ডোবার মতোই অবস্থা। এসব নিয়ে সাপ্তাহিক লিখনী প্রকাশ করছে ধারাবাহিক প্রতিবেদন। এবার ছাপা হলো ৪র্থ কিস্তি। লিখেছেন- রোকন রাইয়ান

কওমি মাদরাসার আদি সূচনা আসহাবে সুফফা থেকে। রাসুলের যুগ থেকে। রাসুলের সা. প্রাথমিক যুগে মূলত মদীনা রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমা ছিল কয়েকশ বর্গ কিলোমিটার। ওখানকার কার্যক্রম, আচার-আচরণ ও সংস্কৃতিও ছিল একটা নির্ধারিত সীমানার ভেতর। সাহাবারা কোনো সমস্যায় পড়লেই ছুটে যেতেন রাসুল সা. এর কাছে। সমাধান হয়ে যেত মুহূর্তেই। তবে খলিফা ওমর রা. এর যুগে ইসলামিক রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমা রেখা বাড়তে থাকে। বিজয় হতে থাকে নতুন নতুন অঞ্চল। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে সভ্যতা-সংস্কৃতির পরিধি। যে কারণে বিস্তৃত হতে শুরু করে ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতির। ফলে ইরাকে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। সেখানকার শিক্ষক ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.। তবে ছাত্র সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকলে আলী রা. এখানে আসেন। তখন তাকে প্রায় ১২ হাজার মুহাদ্দিস শুভেচ্ছা জানান। এভাবেই এ শিক্ষা চলতে থাকে খেলাফতে রাশেদার সময়। তবে খেলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা দূর্বল হতে থাকলে ইসলামী চেতনায় ভাটা পড়তে থাকে। সেই চাপ পড়ে এ শিক্ষার ওপরও। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে এ শিক্ষাব্যবস্থা ব্যক্তিকেন্দ্রিকে চলে আসে একপর্যায়ে। তবে পরবর্তীতে ১০১৯ সালে আফগানিস্তানে সুলতান মাহমুদ গজনবী ও তার ছেলে বাদশাহ মাসউদ এই শিক্ষা ব্যবস্থার হাল ধরেন। তারা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এ শিক্ষার ব্যয় বহন করেন। তখন থেকে ২০০ বছর পর্যন্ত স্বর্ণযুগই পার করেছে এ শিক্ষা ব্যবস্থা।
তবে রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হতে থাকে সবকিছু। একসময় রাষ্ট্র যেমন সরে পড়ে এ শিক্ষার ব্যয় বহন করা থেকে তেমনি জনসাধারণ বিপুলভাবে সম্পৃক্ত হতে থাকে। এসবের পাশাপাশি এ শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন হয়। হিজরি ৬ষ্ট বর্ষে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাদশাহ নূরুদ্দিন জঙ্গি রহ. এ শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার করেন এবং এর পরিধি বিস্তৃত করেন। সেখান থেকেই আনুষ্ঠানিক হাদিসের দরস চালু হয়। তিনি একটি দারুল হাদিস চালু করেন। এখান থেকেই বড় বড় মুহাদ্দিস তৈরি হতে থাকে। বাদশাহ নূরুদ্দিন রহ. একটি ছাত্রাবাসও চালু করেন। তৈরি করেন বিশাল পাঠাগার। পরবর্তিতে আল্লামা ইবনে আসাকির মিসরের কায়রোতে ৬২২ হিজরিতে দারুল হাদিস নির্মাণ করেন। একই হিজরিতে দামেস্কে মাদরাসায়ে আশরাফিয়া নামে একটি দারুল হাদিসের উদ্বোধন করা হয়। সেখানে হাদিসের দরস পরিচালনা করেন ইমাম নববী রহ.।
বর্তমানে সারা বিশ্বে রয়েছে এ শিক্ষার বিস্তার। তবে সময় ও প্রয়োজনের সঙ্গে চাহিদা মিলিয়ে এসেছে সংস্কার। সিলেবাসে এসেছে পরিবর্তন। কুরআন-হাদিসের পাশাপাশি এসেছে ফিকাহ, ফালসাফাসহ অন্যান্য বিষয়াদি। তবে বাংলাদেশে কওমী সিলেবাসে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। অবশ্য সিলেবাস পরিবর্তনে যে শিক্ষাব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ত এমন আশঙ্কায়ও শঙ্কিত রেখেছে আলেমদের। ফলে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে অন্যরা ইসলামকে ব্যবহার করেছে। পঞ্চিমা শিক্ষা বা প্রতিষ্ঠানের গায়ে ইসলামী পোশাক দিয়ে ফায়দা নিয়েছে একশ্রেণীর সুবিধালোভীরা। অথচ সময়োপযোগী সংস্কার হলে কওমি শিক্ষা সর্বোচ্চ শিখরেই পৌঁছে যেত এমনটাই মতামত দিয়েছেন অধিকাংশ কওমি পড়–য়া ছাত্র-শিক্ষক। বিশিষ্টজনদের ভাবনাও এমনই। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলকুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এ বি এম হিজবুল্লাহ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমার জীবন পরিচালিত হয়েছে কওমি মাদরাসাকেন্দ্রিক। পবিত্র কুরআন-হাদিস শিক্ষার ফাউন্ডেশন অর্জন করেছি কওমি মাদরাসা থেকে। আমি মনে করি আমার উপরে ওঠার যে সিঁড়ি সেটা তৈরি করেছে কওমি মাদরাসা থেকে। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি কওমি মাদরাসার ছেলেরা যদি একসঙ্গে সাধারণ শিক্ষার সুযোগ পেত তাহলে অন্যদের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ দিয়ে সামনে এগিয়ে যেত। এমন নজির আমাদের সামনে অসংখ্য। কওমি মাদরাসা থেকে আসা ছেলেরা বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে বিগত কয়েক বছরে যেই কর্মক্ষেত্রে অবতরণ করে সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে সবখানেই।
উল্লেখ্য, ড. এ বি এম হিজবুল্লাহ কওমি মাদরাসা থেকে হিফজ ও দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করার পর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যপনা করে যাচ্ছেন।
তার কথায় একটি বিষয় স্পষ্ট। কওমি পড়–য়াদের সুযোগ দিতে হবে। তাদের উপরে উঠার সিঁড়ি তৈরি করে দিতে হবে। আর সেটা করা গেলে অফুরন্ত সম্ভাবনার হাতছানি রয়েছে মাদরাসা ছাত্রদের জন্য। প্রশ্ন হলো সেই সুযোগ তৈরিতে সংশ্লিষ্ট মহল কতটা আন্তরিক? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র জা

কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি কোন পথে


দেশের প্রচলিত তিন ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার একটি কওমি মাদরাসা। এক সময় এর পরিসর ছোট হলেও এখন এর গ-ি বেড়েছে। দিন দিন বাড়ছে ছাত্র সংখ্যা। অপেক্ষাকৃত কম খরচের কারণে গরিব-এতিম ছাত্র-ছাত্রীরা সুবিধা নিতে পারছে এর থেকে। তাই বড় করে সামনে আসছে এ শিক্ষার ভবিষ্যৎ। উচ্চকিত হচ্ছে স্বীকৃতির আওয়াজ। তাদের কথাÑ এখন আর এ শিক্ষাকে উপেক্ষার সুযোগ নেই। এখান থেকে প্রতিবছর হাজারো ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা নিয়ে বের হচ্ছেন। রাষ্ট্রের কোনো রকম সহযোগিতা ছাড়াই স্বউদ্যোগে যুক্ত হচ্ছেন বিভিন্ন পেশায়। দেশে সম্মানজনক পেশায় যারা যুক্ত হতে পারছেন না তারা চলে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে। দেশের রেমিটেন্সে একটি বড় অবদান রয়েছে এই মাদরাসা শিক্ষিতদের। দেশের লাখ লাখ মসজিদ এবং মক্তব মাদরাসাই হল তাদের প্রধান কর্মক্ষেত্র। সনদের সরকারি স্বীকৃতি না থাকায় তারা তাদের মেধা-যোগ্যতাকে সর্বত্র কাজে লাগাতে পারছে না। অনেকের মধ্যে বলিষ্ঠ নৈতিকতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যুক্ত হতে পারছে না দেশের উন্নয়নের মূল শ্রুতধারায়। দেশ বঞ্ছিত হচ্ছে একটি বিশাল নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষিত জনশক্তির সেবা থেকে।
কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসের তথ্য অনুযায়ী দেশে ২০ হাজার কওমি মাদরাসা রয়েছে। এসব মাদরাসা থেকে প্রতিবছর শিক্ষা শেষ করে বেরুচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রী। এদের রাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন, কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই ওঠেছে এ শিক্ষার স্বীকৃতি। জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বেশ কয়েকটি বোর্ড কাজ করছে কওমি শিক্ষা নিয়ে। তবে কে কবে সর্ব প্রথম স্বীকৃতির দাবি জানায় এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। সিলেটের এদারায়ে তালিম সর্ব প্রথম স্বীকৃতির দাবি জানানোর কথা বললেও ঢাকার বেফাকুল মাদারিস দাবি করে তারাই সর্ব প্রথম এ দাবি তুলে সরকারের কাছে। তবে সব বোর্ড এখন এ কথার ওপর একমত যে কওমি মাদরাসা শিক্ষার স্বীকৃতি প্রয়োজন।
মূলত ৯০ দশকের শুরুতে স্বীকৃতির আলোচনা শুরু হলেও সবার সম্মিলিত দাবি ওঠে গত চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার আমলে। এ দাবি প্রথমে ব্যক্তি বা মাদরাসাকেন্দ্রিক হলেও পরে তা সর্বস্তরের আলেম ও ছাত্র-শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করে। ধীরে ধীরে আন্দোলন গতিশীল হতে থাকে। এক সময় কওমি মাদরাসার সবচেয়ে বৃহৎ বোর্ড বেফাকুল মাদারিস এ লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি ও বিবৃতি দিতে থাকে। পাশাপাশি চলতে থাকে আলেম-ওলামা, ছাত্র-শিক্ষকদের সম্মিলিত সমাবেশ-সেমিনার। এসব সমাবেশ সেমিনার থেকে উদ্দেশ্য লক্ষ্যগুলোও তুলে ধারা হয় স্পষ্টভাবে। যে কারণে সরকারও এদিকে নজর দিতে বাধ্য হয়। গত চারদলীয় ঐক্যজোট সরকার আমলে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। তবে সেটা বেশি দূর এগোয়নি। সেই ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে সবশেষে ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল মহাজোট সরকার ১৫ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করে। অবশ্য পরে বেফাকের দাবির মুখে আরো দুজন সদস্য বৃদ্ধি করে ১৭ জনে নেয়া হয়। এই কমিশন গঠনের আগে সরকার শীর্ষ আলেমদের নিয়ে কয়েকটি বৈঠকও করে। যেখানে দেশের সব কওমি বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ১৭ সদস্যের এই কমিশন নিয়ে দেশের কওমি ছাত্রসমাজ বেশ আশান্বিত হয়েছিলেন।
৯ এপ্রিল গঠিত কওমি কমিশনে সদস্যদের মধ্যে রয়েছেনÑ দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা আহমদ শফী (চেয়ারম্যান)। গোপালগঞ্জের গহরডাঙ্গা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি রুহুল আমীন (সদস্য সচিব) ইকরা বাংলাদেশের পরিচালক মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ (কমিশনের কো-চেয়ারম্যান)।
সদস্য হিসেবে রয়েছেনÑ চট্টগ্রামের জামিয়া দারুল মাআরিফের মহাপরিচালক মাওলানা সুলতান যওক নদভী, চট্টগ্রামের পটিয়া মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম বোখারি। কুমিল্লার জামিয়া কাসেমুল উলুম মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আশরাফ আলী, কিশোরগঞ্জের জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহতামিম মাওলানা আনোয়ার শাহ, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার দীর্ঘদিনের মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার, সিলেটের হোসাইনিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল বাসেত বরকতপুরী, ঢাকার মিরপুরের মারকাযুদ দাওয়াহ আল-ইসলামিয়ার শিক্ষাসচিব মাওলানা মুফতি আবদুল মালেক, ঢাকার ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মোহাম্মদপুর ঢাকার প্রিন্সিপাল মুফতি মাহফুজুল হক, বসুন্ধরার ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের শিক্ষাসচিব মুফতি এনামুল হক, হবিগঞ্জের মাদরাসা নূরে মদিনার প্রিন্সিপাল মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া আলী অ্যান্ড নূর রিয়েল এস্টেটের প্রিন্সিপাল মাওলানা হিফজুর রহমান। বগুড়ার জামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদুল হক হক্কানি এবং খুলনার জামিয়া দারুল উলুম মাদরাসার হাফেজ মাওলানা মোশতাক আহমাদ।
কমিশন গঠনের পর বিষয়টি সর্বমহলে বেশ আলোচনায় আসে। কয়েকটি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয় সদস্যদের। এর অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হয় আশকোনা হজক্যাম্পের দ্বিতীয় তলার একটি রুম।